হঠাৎ করে ফেসবুক মেমরিতে গত বছরের একটি ছবি চলে আসলো, এই ছবিটি আমার প্রিয় ছবিগুলোর একটি। তখন হঠাৎ করে মনে হল, আমি আমার পুরানো ইভেন্ট গুলো নিয়ে কিছু ব্লগ পোস্ট লিখতে পারি। কেননা প্রতিটি ইভেন্ট অনেক বেশি তথ্য বহুল ছিল। আমি শিখেছি অনেক কিছু, শেয়ার করেছি অনেক কিছু। সব ইভেন্টে সবাই ছিলেন না। তাই আমার এই শেয়ার থেকে হয়ত অনেকের কিছু নতুন জিনিশ নিয়ে কাজ করার সুযোগ হতে পারে।
বিজনেস ইনোভেশন সামিট ২০১৮
বাংলাদেশ ইনভেশন ফোরামের আয়োজিত ২য় বিজনেস ইনোভেশন সামিট ছিল এটি। এখাতে দেশের সনামধন্য সব প্রফেশনালদের সাথে আমার নিজের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা শেয়ার করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যাদের দেখে অনুপ্রানিত হয়ে হার্ডওয়ার্ক করা শিখেছি, তাদের সাথে একই মঞ্চ শেয়ার করা আমার জন্য অনেক বড় একটা অনুপ্রেরনা ছিল। তাই শুরুতেই ইনোভেশন ফোরামকে অসংখ্য ধন্যবাদ 🙂
আমি কথা বলেছিলাম, ডিজিটাল মার্কেটিং প্রাকটিস নিয়ে, “Transform Your Digital Marketing Practice”
আমার সেশনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরলাম আপনাদের জন্য
জেইগারনিক ইফেক্টঃ
আমাদের মস্তিস্ক ইনকমপ্লিট কাজগুলাকে তুলনামুলক ভাবে ব্রেইন এ বেশিক্ষন স্টোর করে রাখে। উদাহরন হিসেবে আপনারা যেকোন রেস্টুরেন্টের ওয়েইটারদের বিহেভিয়ার খেয়াল করে দেখতে পারেন। বিল হবার আগ পর্যন্ত তার স্পষ্ট মনে থাকে আমরা কি কি খেয়েছি। বিল দিয়ে দিন। তারপর ওখানে বসে আরো দশ মিনিট আড্ডা দিন। তারপর তাকে প্রশ্ন করুন, আমরা যেন কি কি খেয়েছিলাম? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা সেটা পুরাপুরি মনে করতে পারবে না। কিন্তু বিল দেয়ার আগে ৩০ মিনিট গল্প করেন, তারা ভুলবে না। এটাকে Zeigarnik effect বলা হয়।
আমরা ব্লগ লিখার সময় এরকম হয়। কি নিয়ে লিখবো, কোন আইডিয়া নিয়ে লিখবো তা খুজে পাওয়া যায় না। কঠিন মনে হয়। তাই আর লিখাই শুরু করা হয় না। কিন্তু আপনি যদি আকডুম বাকডুম দিয়েও লিখা শুরু করে দেন, দেখবেন তারপর এইদিক সেইদিক দিয়েই আইডিয়া চলে আসতেসে, লিখার একটা স্পীড চলে আসতেসে। এটা ঐ Zeigarnik effect এর ফল। ব্রেইন পেন্ডিং / ইনকমপ্লিট পোর্শনটাতে বেশী ফোকাস করে।
আরেকটা বেপার, আমরা যারা মার্কেটিং, সেলস, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছি, অথবা নিজের ব্যাবসা পরিচালনা করছি, তাদের সবাইকেই আসলে বায়ার সাইকোলজি নিয়ে কাজ করতে হয়। বায়ার সাইকোলজি না জানলে মার্কেটিং ক্যাম্পেইন সঠিক ভাবে পরিচালনা করা কষ্টকর। আমি কিছু সাইকোলজিকাল প্রসেস হাইলাইট করার চেষ্টা করছি যা আমি সেই সেশনে করেছিলাম।
১) রেসিপ্রোসিটিঃ
আমরা ছোট থেকেই একটি জিনিশ শিখে বড় হই, কেউ আমাদের কিছু দিলে আমরাও তাকে কিছু না কিছু দিতে পছন্দ করি। যেমন ছোট বেলায় আমাদেরকে কেউ চকলেট দিলে আমাদেরকে শেখানো হয় তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য। এই অভ্যাসটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের বায়িং বিহেভিয়ারকে ইনফ্লুয়েন্স করে থাকে।
লক্ষ্য করে দেখবেন ওয়েবে সবসময় কিছুনা কিছু ফ্রী দেয়া হচ্ছে, যা আপনাকে সেই ব্র্যান্ডের সাথে কানেক্ট থাকতে প্ররোচিত করে।
ফ্রী দেয়ার জন্য কিছু আইডিয়া দেয়া যেতে পারে
- ইবুক
- ওয়েবিনার
- ফ্রী কন্সালটেশন
- ফ্রী ট্রায়াল
- ডিস্কাউন্ট
- কেস স্টাডি
- ফ্রী কোর্স সহ আরো অনেক কিছু
২) পছন্দ/ভাল লাগাঃ
একটু খেয়াল করে দেখেন, আমরা এলাকাতে অনেক সেলুন থাকলেও যেকোন একটি সেলুন থেকেই চুল কাটাই, একই অবস্থা মেডিসিনের দোকান ও মুদির দোকানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এটা এমন নয় যে অন্য দোকানগুলো ভাল না, তারাও হয়তো ভাল। কিন্তু কোন না কোন কারনে আপনার সেই দোকান গুলোর সাথ সুসম্পর্ক হয়ে যাবার কারনে আর অন্য কিছু ট্রাই করে দেখা হয় না। এই মুহুর্তে সেই দোকানির করনীয় হচ্ছে ক্রেতার সাথে সেই সুম্পর্কটা ধরে রাখা। অথবা নতুন কাস্টমারদের ক্ষেত্রে সেই সম্পর্কটা তৈরি করা। এটা যে খুব সহজ একটা জিনিশ এমন নয়, তবে এটা করতে পারলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
৩) সোশ্যাল প্রুফঃ
আগে মানুষের পছন্দ অপছন্দ মানুষকে এত বেশি প্রভাবিত করতে পারতোনা এখন যতটা পারে। কেননা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ভাল লাগার ব্যাপারগুলো যেমন খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়, তেমনি খারাপ লাগার বেপারটাও।
তাই কেউ কাউকে ফ্রেন্ড হিসেবে এড করার ক্ষেত্রে, মিউচুয়াল ফ্রেন্ড কে সেটা লক্ষ করে। কোন পেইজে লাইক দেয়ার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ফেসবুকও আপনার এংগেইজমেন্টের উপর বেস করে আপনার পরিচত মুখ গুলোকে দেখাবে 🙂
তারমানে আপনার কাস্টমার কোন কিছু কেনার আগে সোশ্যাল প্রুফ দেখতে চাইবে।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক মার্কেটিং এর শুরু, যা জানতে হবে।
৪) অথরিটিঃ
মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পন্য/সেবা কেনার সময় তার বাজেটের মধ্যে বেস্ট ব্র্যান্ড থেকে কিনতে চায়। আর বেস্ট ব্র্যান্ড কোনটা তা বুঝার জন্য সেই ব্র্যান্ডের অথরিটি কেমন তা আইডেন্টিফাই করতে চায়। আর এ কারনেই প্রতিটা ব্র্যান্ড, ব্র্যান্ডিং এর পেছনে এত এত টাকা খরচ করে। প্রোডাক্ট প্রমশন, ইভেন্টে স্পন্সরিং সহ আরো অনেক কিছু করে। আপনার আমার ক্ষেত্রেও পন্য/সেবার মার্কেটিং এর সাথে সাথে ব্র্যান্ডিং নিয়ে একটু ভাবতে হবে, অথরিটি বিল্ড নিয়ে একটু ভাবতে হবে।
আনলিমিটকনে আমার প্রেসেন্ট করা ক্লায়েন্ট একিউসিশন সিস্টেম সম্পর্কিত সেশনটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরো বেশ কিছু মজার বেপার আছে, সেগুলো পরবর্তী পোস্টে শেয়ার করবো। আমার সব পোস্ট এবং ছোট বড় আরো কিছু টিপস পেতে জয়েন করুন আমার ফেসবুক গ্রুপে 🙂