বলা হয়ে থাকে যে কোন অভ্যাস গড়ে তুলতে অথবা অভ্যাস পরিবর্তন করতে ৬৬ দিন লাগে। কিন্তু মজার বেপার হচ্ছে এটা ৬৬ দিন হোক, ৬ দিন হোক, আর ৬৬৬ দিন হোক, মানুষ কোন কারন ছাড়া তার অভ্যাস পরিবর্তন করতে চায় না। এই কারনগুলো দুই রকম হয়ে থাকে।
- ১# কোন সমস্যাতে আছি, মনে হচ্ছে অভ্যাসটা পরিবর্তন করলে সমস্যা থেকে বের হওয়া যাবে অথবা সমস্যাটা কমবে।
- ২# কোন গোল এচিভ করতে চাচ্ছি, যার জন্য অভ্যাস পরিবর্তন করা দরকার।
কারন যেটাই হোক, অভ্যাস পরিবর্তন করা একটি কঠিন কাজ। কিন্তু এই কাজটুকু করতে পারলেই ছোট ছোট ইম্প্রুভমেন্ট দেখা যায়, আর এই ছোট ছোট ইম্প্রভমেন্ট গুলো সমষ্টিগত ভাবে ভাল ফলাফল এনে দেয়। তাই যদি আমরা অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ হতে চাই, আমাদের সময়কে বেস্ট ওয়েতে ইউটিলাইজ করতে চাই, তাহলে আমাদের একটি ভাল ডিসিপ্লিন এবং প্রোডাক্টিভ অভ্যাস তৈরি করতে হবে। আমি নিজে আমার দিনটাকে বেটার ওয়েতে ম্যানেজ করার জন্য একটি সুন্দর অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আর তাই ভাবলাম আপনাদের জন্যও আমার এ পর্যন্ত পাওয়া লার্নিং গুলো লিখে ফেলি, হয়ত অনেকের কাজে লাগতে পারে।
নিচে আমি কিছু পয়েন্ট হাইলাইট করেছি।
#১, নিজেকে প্রশ্ন করা, আমি কেন এই নতুন অভ্যাস তৈরি করতে চাচ্ছিঃ
যেকোন জিনিশ শুরু করার আগে পরিষ্কার ধারনা থাকা দরকার আমি এটা কেন করতে চাচ্ছি। যত পরিষ্কার ধারনা থাকবে, তত ভাল কর্মপরিকল্পনা করা সম্ভব। যেমন আমি আমার অভ্যাস পরিবর্তন করতে চাচ্ছি, কেননা আমি বিশ্বাস করি, সুন্দর ডিসিপ্লিন লাইফ, অনেক অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করতে সাহায্য করে। আমরা বেশির ভাগ সময় ১ ঘন্টার কাজ ৩ ঘন্টায় করি ডিসিপ্লিনের অভাবে। কাজের মাঝে আমরা অনেক বেশি ডেস্ট্রাকটিভ ম্যাটেরিয়াল দিয়ে সারাউন্ডেড থাকি। এর মধ্যে অনেকগুলো ডেস্ট্রাক্টিভ জিনিশকে চাইলেই সড়িয়ে রাখা যায়, যেমন মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি।
যাই হোক এখন প্রশ্ন হতে পারে, এই প্রশ্ন প্রতিদিন নিজেকে করার কী আছে?
কারন আছে, আমরা যে স্পীড নিয়ে কোন কিছু শুরু করি, তা সবসময় ধরে রাখতে পারিনা, তাই আমাদের প্রতিদিন একই প্রশ্ন করার মাধ্যমে আমরা আমাদেরকে রিমাইন্ড করাতে পারি, যাতে আমরা ট্রাক থেকে হারিয়ে না যাই।
#২, প্রায়রিটি সেট করে টু-ডু লিস্ট তৈরি করাঃ
প্রতিদিন আমরা অসংখ্য কাজের মাঝে জড়িয়ে থাকি, কিন্তু এর মধ্যে কিছু কাজ থাকে যা টপ প্রায়রিটি। এই কাজগুলোকে আলাদা করতে না পারলে প্রোডাক্টিভ হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না। আমাদেরকে প্রতিদিনের জন্য ৪/৫ টা সবচাইতে গুরুত্বপুর্ন কাজ আলাদা করতে হবে। যা আমাকে এনশিউর করতেই হবে যে টাইমের মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকিগুলো বোনাস। এবং বেটার অপশন হচ্ছে আগের দিন রাতেই তা রেডি করে রাখা, অথবা সকালে উঠেই সবার প্রথমেই সেই দিনের কর্ম পরিকল্পনা রেডি করে ফেলা। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ব্রেইন যতো রিল্যাক্স থাকে, দিন গড়ার সাথে সাথে ব্রাইন ততোই ক্লান্ত হতে থাকে।
এই টপিকের উপর আমার একটি অডিও লাইভ ছিল, চাইলে এখান থেকে শুনে নিতে পারেন।
#৩, পর্যাপ্ত ঘুমঃ
টেকনোলজির এই যুগে টিকে থাকতে হলে দরকার হয় ক্রিয়েটিভিটির। এবং ক্রিয়েটিভিটির জন্য আমাদের ব্রেইনকে পর্যাপ্ত রেস্ট দিতে হবে। অনেকটা ডিভাইসের রিস্টার্টের মত। ডিভাইস হ্যাং করেছে, সমাধান কী? রিস্টার্ট দেয়া। আমাদের রিস্টার্ট হচ্ছে ঘুম। একটানা ৬-৮ ঘন্টা ঘুমালে রিস্টার্ট দেয়ার কাজ হয়ে যায়। কারো ক্ষেত্রে একটা ৬-৮ ঘন্টা ঘুমালেই হয়, আবার কারো হয়ত দুই বারে ঘুমাতে হয়, রাতে একটু এবং দিনে একটা ছোট ঘুম। আরো একটি মজার বেপার হচ্ছে ভোরে ঘুম থেকে উঠা। ভোরে উঠতে পারলে সকাল ১০ টার মধ্যেই দেখবেন অনেক কাজ শেষ 🙂
#৪, স্কীল ডেভেলপমেন্টের জন্য ১ ঘন্টা সময় ডেডিকেটেড ভাবে রাখাঃ
কাজ বেশি থাকবে, কম থাকবে। এখান থেকে বের হবার সুযোগ নেই। তবে একটু গুছিয়ে করলে, হয়তো সময় বের করা সম্ভব। আমাদের অভ্যাসের মধ্যে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘন্টা সময় থাকা উচিত যেটাকে আমরা আমাদের স্কীল ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজে লাগাবো।
- এটা হতে পারে কোন বই পড়া, ব্লগ পোস্ট পড়া, পিডিএফ পড়া, ইন্ডাস্ট্রি ইনসাইট অথবা কেস স্টাডি।
- হতে পারে ভিডীও দেখা, পডকাস্ট/অডিও বুক শুনা।
- হতে পারে কোন ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টের সাথে সময় কাটানো।
মুল কথা হচ্ছে রেগুলার কাজের ফাকে একঘন্টা সময় আলাদা করে রাখা, যেটাকে আমরা আমাদের ডেইলিং লার্নিং এর অংশ হিসেবে ইউটিলাইজ করবো।
#৫, প্রতিদিন অন্তত এক ঘন্টা হাটা/ব্যায়াম করাঃ
আমরা অনেক পরিশ্রম করি আমাদের বেটার ফিউচারের জন্য, এবং বেটার ফিউচার ফিটনেস ছাড়া কল্পনা করা যায় না। আমরা যদি শারিরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরি, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যাই তাহলে প্রফেশনালি অনেক সফল হবার পরেও সফলতা সেলিব্রেট করা যাবে না। আমরা যারা অনলাইন সেক্টরে কাজ করি, আমাদের হাটাচলা খুবই কম হয়, যা আসলেই খুব চিন্তার বিষয়। আমি নিজেও আমাকে নিয়ে চিন্তিত। তাই আমাদের প্রতিদিনের কাজের রুটিনের সাথে সাথে এক ঘণ্টা হাটা/ব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
মজার বেপার হচ্ছে আপনি কিন্তু হাটতে হাটতে পডকাস্ট/অডিও বুক শুনতে পারেন। তারমানে, হাটা এবং স্কীল ডেভেলপমেন্ট এক সাথে।
#৬, পার্ফরমেন্স ট্রাক করাঃ
আমরা আমাদের কাজ গুলো ঠিক ভাবে করছি কিনা এটা বের করাও জরুরি। আমরা এক্সেল, অথবা কোন প্রজেক্ট/টাস্ক ম্যানেজমেন্ট টুলস ব্যাবহার করতে পারি, যেখানে দিন শেষে আজ সারাদিন কী কী করার কথা ছিল এবং কতটুক হয়েছে সেটা দেখতে পারবো।
যেমনঃ
- প্রায়রিটি কাজ গুলোর অগ্রগতি,আমি কী টাইমলি শেষ করতে পেরেছি
- আজ সারাদিনে কী কী পড়লাম এবং কী শিখলাম
- ঘুমের আপডেট ইত্যাদি 🙂
সবাই ভাল থাকবেন, আর আমার ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে পারেন 🙂
ভাল মার্কেটার হতে চাইলে এই অভ্যাসগুলোও আপানাকে সহায়তা করবে।