fbpx

বিজনেস প্রটোকল নিয়ে কিছু ভাবনা

২০১০ সালের একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করি। আমি কেন্দ্রিও ব্যাংকে গিয়েছিলাম একটা ডকুমেন্ট আনতে। ডকুমেন্টটা রেডি হবার এক মাস পর গিয়েছিলাম। তাই ফাইলটা ডেস্ক থেকে কর্মচারীর কেবিনেটে চলে গিয়েছিল। এখানেই উনি বিরক্ত ছিলেন, কারন এখন তার চাবি আনিয়ে কেবিনেট খুলে তারপর আমার ডক টা খুজে বের করতে হবে। এই কারনে উনি আমাকে বিরক্ত হয়ে কিছু কথা বলেছিলেন যা আমার একদমই ভাল লাগেনি। আমি আমার ডকটা নিয়ে তার ডিপার্টমেন্ট এর উর্ধতন কর্মকর্তার রুমে গেলাম। গিয়ে তাকে ঘটনা খুলে বললাম। উনি সেই মহিলাকে ডাকিয়ে আনলেন। তারপর উনি সেই মহিলা এবং তাদের ডিপার্টমেন্ট এর পক্ষ থেকে আমাকে সরি বললেন, এবং কমপ্লেইন করার কারনে এপ্রিশীয়েট করলেন। সেই মহিলা কিন্তু আমাকে সরি বলেনি, সরি বলেছে ডিপার্টমেন্টের উর্ধতন কর্মকর্তা। কারন ইন্ডিরেক্টলি এই ফল্ট তার উপরেও বর্তায়।

আমি চলে আসার পর কি হয়েছিল তা জানিনা, উনি হয়ত অবশ্যই সেই কর্মচারীকে বকা ঝকা করেছেন। এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে সেই মহিলা কিন্তু আমার সাথে তার বড় সারের রুমে কোন কথা বলেনি। এটাই প্রফেশনাল প্রটোকল।

আমি সার্ভিস প্রোভাইড করি প্রায় ৭ বছর। এর মধ্যে আমাদের টিমমেট রা অনেক বার ভুল করেছে। ক্লায়েন্ট এর কাছে সবসময় আমিই সরি বলেছি, কারন টিমমেট দের ভুলের দ্বায় তো আমাকেই নিতে হবে। তারপর টিমমেটদের পানিষমেন্ট কি হবে তা ভিতরের বেপার।

ডন ভাই এর একটা ভিডীও দেখেছিলাম, খুব ভাল লেগেছিল। উনি মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন, এক হচ্ছে প্লেয়ার, আর এক হচ্ছে অডিয়েন্স। অডিয়েন্স হচ্ছে তারা যারা তার লাইফে যা কিছুই নেগেটিভ ঘটে তার জন্য অন্য কাউকে দায়ি করে। আরেক গ্রুপ হচ্ছে প্লেয়ার। তারা তাদের লাইফে ভাল খারাপ যা ঘটে তার জন্য নিজেকেই দায়ি করে এবং সেই অনুপাতে একশন নেয়।

ধরেন আমার অফিসে সবাই দেরি করে আসে। এতে আমি কি করতে পারি। মেজাজ খারাপ করতে পারি, ভাবতে পারি, ধুর, এভাবে কাজ আগাবে কি করে, এরা ভাল না দেরি করে আসে ইত্যাদি ইত্যাদি। দোষ আমি তাদের উপর চাপিয়ে দিলাম, এটা অডিয়েন্স সুলভ আচরন। এ থেকে শুধু ডিপ্রেশন বাড়বে, বিরক্তি বাড়বে।

আবার আমি ভাবতে পারি, আমার রোল কি? আমার রোল হচ্ছে তাদেরকে ঠিক টাইমে অফিস এন্ট্রিতে বাধ্য করা। এবার দ্বায় যেহেতু আমার তাই সলিউশন আমাকেই বের করতে হবে। এবার আমি বিভিন্ন জিনিশ ট্রাই করতে পারি, কন্সাল্টেশন, পানিশমেন্ট, টাকা কাটা, জব টারমিনেট ইত্যাদি। এবং একসময় হয়ত সলিউশন চলে আসবে।

প্রতিষ্ঠান একটা টিম এর মত, এখানে সফলতা ব্যার্থতা পুরাটাই টিম নির্ভর। কে ক্যাচ মিস করেছে, বাজে বল করেছে এগুলা ভিতরের বেপার, বাইরের বেপার হচ্ছে দলগত ভাবে কি রেজাল্ট আসছে।

দেশের বাইরে যখন আমরা থাকি, তখন আমাদের নিজেদের নাম এর চাইতেও আমাদের বড় আইডেন্টিটি হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি। আমি ভাল কিছু করলে পুরা বাংলাদেশ তার সুনাম পায়, আবার খারাপ কিছু করলে তার বদনামের ভাগিদারও পুরা বাংলাদেশ হয়।

এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে গিয়েও সেই একই এক্সপেরিয়েন্স। তবে ডেভেলপড কান্ট্রির ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু জিনিশ শিখেছি, যা আমাকে অনুপ্রানিত করে।

  • ওরা প্রতিটা কাজের জন্য যেভাবে এপ্রিশিয়েট করে তা অবাক করা একটা বেপার। ওদের কথার মধ্যেই না শুধু, ওদের ফিলিং এর ভিতরেও এইটা থাকে। আমি ওদের এই অভ্যাসটা প্রাকটিস করার চেষ্টা করি আমার সারাউন্ডেড যায়গা গুলাতে।
  • তাদের পাংচুয়ালিটি।
  • সরি বলার মনভাব। আমেরিকান ক্লায়েন্টরা যখন শূনে যে আমি মাঝ রাতে মিটিং করছি, ওরা সরি বলে। যদিও এই সময় ব্যাবধানের জন্য ওরা দায়ি না, আর মিটিং টা পুর্বের স্কিডিউল করা মিটিং, তারপরেও ওরা সরি বলে, যা আপনাকে একটা বেটার ফিলিং দিবে।

ওদের সাথে কাজ করতে করতে এই স্বভাবগুলা নিজের মধ্যে ইঞ্জেক্ট করার চেষ্টা করি, কতটুকু পেরেছি তা সারাউন্ডেড মানুষজন বলতে পারবে।

অনেকদিন ধরে বাংলা ব্লগিং থেকে দূরে আছি, ফেসবকুস স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে মনে হল, বাংলা ব্লগিংটা এই পোষ্টের মাধ্যমেই আবার শুরু করে দেই।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top