fbpx

ইকমার্স বিজনেস বড় করার ৭ টি পরীক্ষিত পদ্ধতি

ধরেন আপনি একটি রেস্টুরেন্ট এ খেতে গেলেন, আপনি দেখলেন ওনারা নুডুলস একটি ময়লা এবং ভাঙ্গা প্লেট এ পরিবেশন করছে। আপনি কী খাবেন?

অথচ আপনি খেলে হয়তো দেখতেন ওনাদের নুডুলসটা অসাধারণ। তারমানে ওনাদের পণ্যের কোয়ালিটি অনেক ভাল। কিন্তু তারপরেও সেল হবে না, কারন পরিবেশন ভাল নয়।

এই রকম ভুল আমরা সবাই কম বেশি করি। পণ্যের কোয়ালিটি ভাল এটি কাস্টমার তখনই জানবে যখন সে পণ্যটি ব্যাবহার করছে।

আরেকটি ভুল আমি দেখেছি, আর তা হচ্ছে প্রচুর ফিচার। আমরা অনেকেই মনে করি আমার পণ্যের প্রচুর ফিচার রয়েছে তারমানে আমার পণ্য মার্কেটের বাকিদের চাইতে ভাল। অথচ আমরা অনেক সময় স্টাডি করেই দেখি না কাস্টমার কতটুকু ফিচার চাচ্ছে। কাস্টমারের যতটুকু দরকার তার চাইতে অনেক বেশী দিলে একি সাথে একাধিক সমস্যা।

১) আপনি কাস্টমারকে কনফিউজড করছেন

২) আপনি একাধিক ফিচার তৈরি, তাদের ইউ এক্স সব কিছু নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রয়োজনের চাইতে বেশি সময় এবং টাকা ইনভেস্ট করছেন।

যার কারণে আপনার পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যা ক্রেতাকে নিরুৎসাহিত করতে পারে অথবা আপনার চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে দিতে পারে।

আপনার ইকমার্স বিজনেস তখনই বড় হবে যখন আপনি প্রচুর সেল জেনারেট করতে পারছেন। আর সেল তখনি জেনারেট করা সম্ভব যখন আপনি জানেন কোথায় কোথায় ইম্প্রুভমেন্ট করার সুযোগ আছে।

এই পোষ্টটিতে আমি আপনাদেরকে ৭ টি পরিক্ষীত পদ্ধতি শেয়ার করবো যা আমি আমার নিজের এবং দেশ বিদেশের ক্লায়েন্টদের প্রজেক্টে ইমপ্লিমেন্ট করেছি।

১) মানুষ গল্প শুনতে চায়

আপনার পণ্যের পরিবেশনের মধ্যে এক ধরনের গল্প থাকতে হবে। মনে করে দেখেন আমরা একাডেমিক লাইফে কত সূত্র মুখস্ত করেছি। শুধুমাত্র নিউটনের কথাই যদি বলি, তার তিনটি সূত্র হয়ত অনেকের পুরো পুরি মনে নেই। কিন্তু আপেল পরার ঘটনাটা মোটামুটি সবার মনে আছে। মানুষ যদি কোন ব্র্যান্ড অথবা পণ্যের পেছনের গল্পটা জানে তাহলে মানুষ এটি বেশি দিন মনে রাখে।

তাই আপনি চিন্তা করতে পারেন আপনার ব্র্যান্ড এর গল্প আপনি কিভাবে মানুষ কে জানাবেন। আপনার পণ্যের পেছনের গল্প কিভাবে জানাবেন।

গ্রাহক মূলত আপনার গল্পের সাথে তাদের নিজেদের লাইফ কানেক্ট করে থাকে। এতে করে এক ধরনের এঙ্গেজমেন্ট তৈরি হয়। আপনি যখন স্টোরি টেলিং এর মাধ্যমে প্রোডাক্ট তুলে ধরেন, এর ভ্যালু সবার কাছে বেড়ে যায়।

২) গ্রাহক বেনিফিট কিনে

গ্রাহকরা আপনার প্রোডাক্ট কিনে না, তারা সেই রেসাল্ট টি কিনে যা আপনার প্রোডাক্ট দেয়। আপনার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে আপনার গ্রাহক যে উপকার পাবে সেগুলির একটি লিস্ট তৈরি করুন। এই কাজটি করার সাথে সাথে আপনার পটেনশিয়াল কাস্টমার কারা সেটি ও আইডেন্টিফাই করুন।

অনেকেই একটি কমন ভুল করে আর তা হচ্ছে তাদের কে যদি প্রশ্ন করেন আপনার টার্গেট কাস্টোমার কারা, তারা অনেক সময় এমন উত্তর দেয়, যে সবাই আমার টার্গেট কাস্টোমার। যা তাদেরকে মার্কেটিং প্লান করতে ঝামেলাতে ফেলে এবং ফলাফল হিসেবে রিটার্ন কম আসে।

তাই প্রথমেই পরিষ্কার ধারনা নেয়ার চেষ্টা করেন আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা। তাদের মুল সমস্যা কোথায়, এবং আপনার সলিউশন কিভাবে তাদেরকে এখানে সহায়তা করবে। এবং তা পরিষ্কার ভাবে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে।

৩) পেকেজিং অথবা পরিবেশন আকর্ষণীয় করা

মুখস্ত করে ফেলুন, মানুষ অনলাইনে পণ্য কেনে না, কেনে ছবি।

আমার সাথে আবার বলতে পারেন, মানুষ অনলাইনে পণ্য কেনে না, কেনে ছবি। তাই ছবি সিলেকশনের ক্ষেত্রে মনযোগী হতে হবে। এখানে টাকা বাঁচানোর চিন্তা না করে বরঞ্চ এখানে কিভাবে ছবি গুলোকে আরো এট্রাক্টিভ করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে।

আবার এক এক ধরনের পণ্যের পরিবেশন এক এক রকম হতে হবে। যেমন ধরেন খাবার আইটেম। এখানে মুল খাবার এবং পাত্রের কালার আলাদা হতে হবে। খাবার ডীপ কালার হলে আপনি লাইট কালার পাত্রে পরিবেশন করে ছবি তুলতে পারেন।  পাত্র যত সিম্পল হবে খাবার তত সুন্দর ভাবে ফোকাস হবে। যেখানে খাবার রেখে ছবি তুলছেন সেই যায়গাটি অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে, এবং ছবিটা ন্যাচারাল হতে হবে।

মুল কথা হচ্ছে শুধু পণ্য ভাল হলে হবে না, এর পরিবেশন সুন্দর, পরিষ্কার হতে হবে, এক ধরনের ভাল লাগা তৈরি করার মত কিছু থাকতে হবে। এটেনশন গ্র্যাব করার পটেনশিয়ালিটি থাকতে হবে। অন্যথায় মানুষ নোটিশ করবে না, অথবা কিনবে না।

৪) আপনার কম্পেটিটিভ সুবিধাগুলো তৈরি করুন

এই কথাটি হয়ত ইতিমধ্যেই আপনি অনেক বার শুনেছেন। আমার কাছ থেকে আবার শুনুন। ভুলে যাওয়া যাবে না। অথবা গুরুত্ব কম দেয়া যাবে না। আপনার বার বার ভাবতে হবে কেন আপনার পণ্য আলাদা? কেন আপনার ব্র্যান্ড আপনার কম্পেটিটর দের থেকে আলাদা। যদি আলাদা না হয় তাহলে কিভাবে আলাদা করা যায়।

এই যায়গাটা খুবী গুরুত্ব পুর্ন। এই অংশটি নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করছি যা আমি আমাদের We Make Pro গ্রুপে শেয়ার করবো। যদি আপনি এই গ্রুপে জয়েন করে না থাকেন, তাহলে জয়েন করতে পারেন।

৫) সঠিক মূল্য নির্ধারন করুন

পণ্যের দাম বেশী হলে মানুষ কিনবে না এমন টা ভাবা ঠিক না, আবার পণ্যের দাম কম হলেই মানুষ কিনবে তাও ঠিক না। আপনাকে আপনার পণ্যের কোয়ালিটি, মার্কেট ভ্যালু, কম্পেটিটরের প্রাইসিং এবং আপনার টার্গেট কাস্টমারের উপর ভিত্তি করে ডিসাইড করতে হবে।

একটি দাম ডিসাইড করার আগে আপনার অবশ্যই একটি ভাল সময় ইনভেস্ট করতে হবে প্রাইসিং ডিসাইড করার জন্য।

৬) আপনার গ্রাহককে লাইফ লং ধরে রাখতে মনোনিবেশ করুন

“বিজনেস সাকসেস ডিপেন্ডস অন সেকেন্ড সেল”

আমার খুব প্রিয় একটি উক্তি। প্রথম সেল যেকোন ভাবেই পাওয়া যায়। ডিস্কাউন্ট, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। কিন্তু একই কাস্টমার মূলত আপনার কাছ থেকে পরের বার আবার কিনবে তখনি যখন সে প্রথম বার কেনার পর সন্তুষ্ট।

তাই আপনার শুরু থেকেই প্লান রাখতে হবে কিভাবে কাস্টমারকে লং টাইম ধরে রাখা যায়। কিভাবে ভবিষ্যতে তার সাথে কোলাবরেট করবেন সেটার প্ল্যানও আপনার কাছে থাকা উচিত। এটি এপনার ব্র্যান্ড এবং পণ্য এর সাথে কাস্টমারের ট্রাস্ট তৈরিতে সহায়তা করবে এবং আপনার প্রোডাক্ট এর ভ্যালু বাড়াবে।

৭) আপনার সেলস মেসেজ ক্লিয়ার রাখুন

আপনি যদি নতুন মোবাইল গুলার কথা চিন্তা করেন, প্রতিটা মোবাইলেই কিছু না কিছু থাকে যা হাইলাইট করার মত, মানুষ সেই মোবাইলের ক্ষেত্রে বাকি জিনিষ গুলো নিয়ে খুব একটা কথা বলে না।

উদাহরণ, স্যামসং গ্যালাক্সি এস ১০ এ ছিল পাঞ্চ হোল ডিসপ্লে। তার আগে আই ফোন নিয়ে এসেছিল নচ ডিসপ্লে। তারপর এক এক বার এক এক ব্রান্ড ক্যামেরা নাম্বার বাড়িয়ে কমিয়ে আলোচনাতে আসে।

মুল বেপার হচ্ছে আপনার পণ্যের অনেক গুলো ভাল জিনিষ থাকলে আপনার বেশি করে হাইলাইট করতে হবে ১/২ টি দুর্দান্ত পয়েন্ট। যা কিনা কাস্টমারের মেইন এট্রাকশনে পরিণত হবে এবং তার বায়িং ডিসিশন কে প্রভাবিত করবে।

অনেকেই মনে করেন ছোট বিজনেস গুলোকে এগুলো নিয়ে ভাবতে হয় না, আর এটাই তাদেরকে পিছিয়ে দেয়। কাস্টমারের কাছে আপনি ছোট বিজনেস না বড় বিজনেস তা খুব একটা মুখ্য বিষয় নয়, তার কাছে মুখ্য বিষয় হচ্ছে আপনার পণ্য তার সমস্যার সমাধান দিতে পারছে কিনা?

আপনার ব্র্যান্ডকে কতটুকু ট্রাস্ট করা যায়। আপনি কমিটমেন্ট রাখতে পারবেন কিনা। সবসময় কাস্টমার আপনাকে প্রশ্ন করবে তা কিন্তু নয়, অনেক সময় সে এখানে কনফিউজড হতে পারে, এটি মাথায় রেখে আপনাকে প্লান সাজাতে হবে।

আশা করছি যারা ইকমার্স এর সাথে কানেক্টেড আছেন তারা আমার এই পোস্টটি পড়ার পর কিছু জিনিষ নিয়ে নতুন ভাবে ভাববেন এবং কাজে লাগাবেন।

আমার ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন

রিলেটেড পোস্ট:

Scroll to Top