fbpx

বেঙ্গালুরু ডায়েরি – পর্ব ৩

খুব টায়ার্ড, কিন্তু ঘুড়তে ইচ্ছে করছে। হোটেলের উদ্যেশ্যে উবার নিলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে যাচ্ছি লালবাগ বোটানিকাল গার্ডেন, বেঙ্গালুরু। আপনারা যদি আমার আগের দুইটি পর্ব না পড়ে থাকেন, তাহলে এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন।

উবার ছুটে চলছে, ড্রাইভার ভাই বললেন খুব বেশি দূর না। যেতে যেতেই হঠাত একটি যায়গাতে কিছু ভিড় দেখা গেল, কিছুটা ট্রাফিক জ্যামও আছে। আছে বেশ কিছু পুলিশ। ভাল করে লক্ষ করে দেখলাম এটা একটা স্টেডিয়াম, এবং আজ বেঙ্গালুরু এর খেলা আছে, সম্ভবত মুম্বাই এর সাথে (যদিও শিউর না)। ভালই লাগলো, এক সময় আইপিএল এর খেলা দেখতাম, যদিও এখন দেখি না, মাঝে মাঝে খেলা দেখলেও তা শুধু বাংলাদেশের খেলা। পুরো রাস্তা ফাকা থাকলেও স্টেডিয়ামের পাশে কিছুটা জ্যাম লেগে আছে, এবং এটা স্বাভাবিক।

যাই হোক দেখতে দেখতে চলে আসলাম বোটানিকাল গার্ডেন। উবার থেকে নেমে টিকেট কাটলাম। ২৫ রুপি। তারপর হাটতে হাটতে ঢুকে গেলাম বোটানিকাল গার্ডেনের ভেতর। ঢুকার মুঝে এক আইসক্রিমের দোকান থেকে একটি কোণ আইসক্রিম কিনলাম। যেহেতু দুপুরের খাবার খাবার সময় পাইনি, তাই ভাবলাম কিছু একটা খেয়ে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর এরকম সিচুয়েশনে, চকলেট, আইসক্রিম, এই খাবার গুলো দ্রুত এনার্জি দেয়। বোটানিকাল গার্ডেনে ঢোকার সম্ভবত তিনটি গেট। আমি ঢুকেছি সম্ভবত পার্কিং এর গেট দিয়ে। ঢুকতেই একটি বড় পাহাড়ের মত, খুব একটা উচুনা, তবে পাহাড়টি পাথরের। উঠে গেলাম, উপর থেকে ভিউটাও ভালই লাগলো। উপরে একটা মন্দিরও আছে, আছে একটি ভ্রাম্যমান খাবারের দোকান, মেইনলি, স্ন্যাক্স এবং ড্রিঙ্কস।

পাহাড় থেকে নামার পথে আরেক সলো ট্রাভেলারকে রিকোয়েস্ট করে কিছু ছবি তুলে নিলাম, তাকেও তুলে দিলাম। উনি এসেছেন মুম্বাই থেকে।

পাহাড় থেকে নেমেই আরেকটু সামনে এগোতেই একটি বিশাল মাঠ চোখে পরলো, মনে পরে গেল সিঙ্গাপুরের বোটানিকাল গার্ডেনের কথা। অনেকটাই একই রকম। ফোন দিলাম আমার কাসিনকে, যিনি সিঙ্গাপুর থাকেন। উনার সাথেই গিয়েছিলাম বোটানিকাল গার্ডেন। তাই উনাকেও ফোন দিয়ে সিমিলারিটি দেখালাম। কথা বললাম অনেক্ষন।

তারপর আরো একটু হাটছি, এবার গন্তব্য, ফ্রেসরুম/টয়লেট খুজে বের করা। একজনকে জিজ্ঞাস করতেই দেখিয়ে দিল। এখানে ফ্রেসরুম বেবহার করতে হলে রুপি খরচ করতে হবে। কত জিজ্ঞ্যাস করতেই আমাকে বললো, মুরু রুপিয়া, আমি বললাম বুঝি নাই, আবারো বললো, মুরু রুপিয়া, পরে ইংরেজীতে বলতে বলার পর বললো, ৩ রুপিয়া। তারমানে ৩ = মুরু, বেঙ্গালুরুর ভাষার নাম কান্নাদা/কার্নাটা। তারমানে কার্নাটাতে ৩=মুরু। আমাদের মতই আপনি কী করবেন তার উপরে ফী নির্ভর করবে। ছোটটা হলে মুরু, বড়টা হলে কত জানা নেই। টয়লেটের অবস্থা আমাদের পাবলিক প্লেস গুলোর মতই, কিছুটা ভাল হতেও পারে, তবে আমাদের মতই অনেকটা।

ওখান থেকে বের হবার পর কিছুটা এগিয়ে দেখলাম ড্রিঙ্কিং ওয়াটারের ব্যাবস্থা আছে, খালি বোতলটা ভরে নিলাম, কেননা অনেক গরম ছিল। এবং বোটানিকাল গার্ডেনের মত যায়গাতে আপনার অনেক হাটতে হবে। আমার কাধের ব্যাগের অবস্থাও খুব একটা ফ্রেন্ডলিনা, কেননা সকালের শপিং সব আমার ব্যাকপেকের মধ্যে। কিছুটা ভাড়ি। যাই হোক, বোটানিকাল গার্ডেনটা ভালই লেগেছে, কেননা অনেক ফাকা যায়গা, প্রাকৃতিক বাতাস। যেটা আমি ঢাকাতে অনেক মিস করি, মাঝে মাঝে মনে হয় সারাদিন অফিস করার পর যদি এমন একটা খোলা মাঠা পাওয়া যেত, যেখানে যত দূর চোখ যায়, কোন দেয়াল নেই। মাঠ, নদি, পাহাড়, সাগরের পাশেই হয়ত এরকম ভিউ পাওয়া যায়। ঢাকাতেতো আমাদের বিনোদন বলতে রেস্টুরেন্ট, যেটা খুব একটা রিফ্রেসিং না।

যাই হোক, হাটছি, ঘুড়ছি, দেখছি সব কিছু, মাঝে মাঝে কিছু ছবি তুলেছি আপনাদের জন্য।
ভেতরে আপনি চাইলে কিছু ফল/ ড্রিংক্স/স্ন্যাক্স কিনে খেতে পারবেন। খুব টায়ার্ড লাগছিল, ভাবলাম মিরিন্ডা খাই। ডাব খাওয়া যেত, কিন্তু কেন যেন মিরিন্ডা খেতে ইচ্ছে করলো, সম্ভবত, ফ্রীজের ঠান্ডা মিরিন্ডা বেশি তৃষ্ণা মেটাবে এমনটাই ফিলিং আসছিল।

অনেক্ষন ঘুড়লাম, এবার ফেরত আসার পালা, সন্ধাও হয়ে যাবে একটু পর। হোটেলে ফেরত এসে সব গোছাতে হবে। রাত ৩টায় ফ্লাইট। হোটেল থেকে রওনা দিব ১২ টায়। এর মধ্যে হোটেলে গিয়ে সন্ধার খাবার (লেট লাঞ্চ), গোসল করে ফ্রেস হওয়া, লাগেজ গোছানো, তারপর রাতের খাবার, হোটেল চেক আউট।

বোটানিকাল গার্ডেন থেকে বের হয়ে মনে হল কিছু স্ট্রিট ফুড ট্রাই করি, শুরু করলাম পানি পুরি দিয়ে, আমার কাছে আমাদের বাংলাদেশের ফুচকা বেশী ভাল লেগেছে, পানি পুরির চাইতে, কাচুরি খেলাম, পেয়ারার ভর্তা খেলাম। উবার কল করবো, কিন্তু দেখি রাস্তার অপর পাশে একটা বিরিয়ানির দোকান, নাম বিরিয়ানি পেরাডাইস। মনে পড়ে গেল আমাদের রায়হান ভাই এর জমিদারি ভোজের কথা। একবার মনে হল এখান থেকে বিরিয়ানি খেয়ে যাই, আরেকবার মনে হল আপাতত হোটেলে গিয়ে কিছু খাই, দেশে গিয়ে জমিদারি ভোজের বিরিয়ানি খাব, রায়হান ভাই ভাল মানুষ, বিল দিতে দেয় না। যাইহোক অবশেষে টায়ার্ডনেসের কাছে হেরে গিয়ে হোটেলের উদ্যেশ্যে উবার নিয়ে রওনা দিলাম। হোটেলে পৌছাতে প্রায় ৩০ মিনিটের মত লাগলো। সো ট্রিপ প্রায় শেষের দিকে। রাত তিনটায় ফিরতি ফ্লাইট। আসবো কলম্বো হয়ে। এই প্রথম শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স ট্রাই করছি। এক ট্রিপেই ট্রাই করা হল তিনটি ভিন্ন এয়ারওয়েইজ, তাও প্রথমবার।

সবচাইতে এক্সাইটিং বেপার হচ্ছে জীবনের প্রথম বিজনেস ক্লাসে ট্রাভেল করবো, তাই কিছুটা এক্সাইটেড। মজার অভিজ্ঞতাও হয়েছিল, ইন শা আল্লাহ এক্সাইটমেন্ট এবং অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে পরবর্তি পর্বে শেয়ার করবো। সাথেই থাকুন, আমার ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top